প্রকাশিত: Sat, Apr 29, 2023 9:21 AM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 12:45 PM

কেন সত্যজিৎ, মৃণাল ও ঋত্বিক পরিত্যাজ্য!

ব্রাত্য রাইসু : সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক এরা মিডল ক্লাস চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন তাতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হইতেছে, এনারা মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট তৈরিতে সব প্রতিভা খরচ কইরা গেছেন। আজকের যে ছোকরা ডিরেক্টরটি নাটক বা সিনেমা বানাইতে নামছে সেও এই আগাছাদের পরগাছাই হইয়া থাকতেছে, এইটা ঘোরতর সমস্যা।

দার্শনিকভাবে এই তিন চলচ্চিত্রকারকে উৎখাত করা না গেলে আমাদের নাটক-সিনেমা আমাদেরই বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকবে, আরও বহুদিন। প্রথমত, এই তিন চলচ্চিত্রকারকে অনলি ফর মিডল ক্লাস হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এবং তা যদি আপনি করতে পারেন তবে তাদের অবদানকে স্বার্থপর মিডল ক্লাসের নৈতিকতা নির্মাণের কারিগর বিবেচনা করতে হবে। মিডল ক্লাসের আবহমান নৈতিকতা লালন আর সমাজ সংস্কার একসঙ্গে সম্ভব না। আপনি যখন নাটক-সিনেমার মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করতেছেন না তখন আপনি জাস্ট একজন এন্টারটেইনার বা বিনোদন সরবরাহকারী। সত্যজিৎ, মৃণাল ও ঋত্বিক’কে এর বাইরে দেখার কোনো সুযোগ নেই। 

[২] বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে যে মধ্যবিত্ত আর্টওয়ার্ল্ড তার মানসগঠন তৈরিতে সত্যজিৎ, মৃণাল ও ঋত্বিক আছেন, খুব শক্ত ভাবেই আছেন। ওনাদেরকে পরিত্যাগ করা মানে ওনাদের শিল্পকর্ম না দেখা না, বা বর্জন করা না। বরং ওনাদেরকে বেশি কইরাই দেখা। এবং আমাদের নিজেদের মধ্যে ওনারা যেইভাবে আছেন তার বিচার করতে বসা। কেন আমরা লেখা, সিনেমা ও গানে একটা নির্দিষ্ট গড়নের সম্পর্ক সূত্র ও মিডল ক্লাস উপসংহারের পরিগঠিত রূপ ফলো করি তা দেখতে গেলে এনাদেরকে পাওয়া যাবে, ততটা রবীন্দ্র-নজরুলকে পাওয়া যাবে না।

সাহিত্য বা বইপত্রে সমালোচনা ও উত্তর-প্রতিউত্তরের যে কালচার আছে সেই সহনীয়তা সিনেমা লাইনের এইসব মহারাজাদের বেলায় নেই। কাজেই পরিত্যাগ বলতে ‘আর দেখমু না ওনাদের ফিল্ম’ এই রকম কিছু না। শিল্প যে আভিজাত্যের বোধ তৈরি করে তার নিরাকরণ না হইলে মোহ কাটে না। যেই মোহের মধ্যে কালচারহীন বাঙালি মিডল ক্লাস মাথা ঢুকাইয়া বইসা আছে। এরা অভিজাত হইতে পারেনি। বরং আভিজাত্যের উপভোগই এদের আভিজাত্য।

মুগ্ধ বাঙালির জাতীয়তাবোধ ও সন্তুষ্টির পুষ্টি প্রদানকারী এইসব আর্টওয়ার্কের বিচার কেবল এর নির্মাতাদের বিচারে শেষ হওয়ার না, বরং তার বিচার কেন করা যাইতেছে না তার মধ্যেও আছে। লেখক : কবি